Blog
Mpox

Mpox

গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় ভাইরাস হলেও এমপক্স বা মাংকিপক্স সাধারণত অনেক কম ক্ষতিকারক। ১৯৫৮ সালে এক জাতের বানরের শরীরে ভাইরাসটি প্রথম চিহ্নিত হওয়ায় নাম রাখা হয়েছিলো- মাংকিপক্স। ১৯৭০ সালে মাংকিপক্স ভাইরাস প্রথম মানবদেহে শনাক্ত হয়। । ২০২২ সালের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মাংকিপক্স নাম পরিবর্তন করে "এমপক্স" রাখেন। প্রথমে এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক।

 

এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাসটি দ্বারা দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

 

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এমপক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয় আর শত শত মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা। বর্তমানে অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন প্রাদুর্ভাব একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে- বিশেষ করে কঙ্গো এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে। মোটাদাগে এমপক্সের দুটি ধরন রয়েছে - ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। ক্লেড ১ ভাইরাস – কয়েক দশক ধরে কঙ্গোতে বিক্ষিপ্ত প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল এবং এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনটিও এটি। ক্লেড ১’র কিছু ধরনে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

 

এমপক্স ভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে জানানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে সার্বিক প্রস্তুতি এবং পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা জরুরি। আর এসব কারণেই বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা জারি করেছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থা। এমপক্স উদ্বেগের কারণ মূলত আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে সংক্রমণের হার কেমন তার ওপর নির্ভর করছে। এখনই দেশের প্রবেশপথগুলোতে স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। যাদের মধ্যে লক্ষণ দেখা যাবে তাদের পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষ করে এমপক্স আক্রান্ত দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের ওপর আলাদা নজর রাখতে হবে। অর্থাৎ আতঙ্কিত নয় সচেতনতা বাড়িয়ে এই এমপক্স প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।